বাড়িঅন্যান্যসিলেট সমস্যায় চরম দুর্ভোগ

সিলেট সমস্যায় চরম দুর্ভোগ

ভাঙাচোরা রাস্তার মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে মদিনামার্কেট, পাঠানটুলা, রেলস্টেশন এলাকা, কুমারপাড়া, সোবহানীঘাট ও উপশহর।

রিকশায় স্ত্রীকে নিয়ে বসে থাকা পঞ্চাশোর্ধ্ব মো. খালেদ মিয়া দরদর করে ঘামছেন। বেলা পৌনে একটা থেকে সোয়া একটা পর্যন্ত তিনি রিকাবীবাজার-চৌহাট্টা সড়কে যানজটে আটকা পড়েন। তাঁর ভাষ্য, সম্প্রতি নগরে যানজট বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই নগরের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

গতকাল বুধবার বেলা সোয়া একটার দিকে সিলেট নগরের চৌহাট্টায় খালেদ মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। নগরের কাজলশাহ এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি এই চাকরিজীবীর অভিযোগ, ফুটপাত বেদখল, অপ্রশস্ত রাস্তাঘাট, ভাঙাচোরা সড়ক এবং অবৈধ রিকশা ও যানবাহনের অবাধ চলাচলে যানজট বেড়েই চলেছে।

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশতাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আট সমস্যায় নগরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে যানজট, পানির সংকট, মশার উপদ্রব, ভাঙাচোরা রাস্তা, অপর্যাপ্ত সড়কবাতি, জলাবদ্ধতা, অপরিচ্ছন্নতা ও গণশৌচাগারের অভাব।

নগরের বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সত্যজিৎ সরকার জানান, তাঁদের এলাকাসহ নগরের অর্ধশতাধিক এলাকায় পানির তীব্র সংকট আছে। নগরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় পর্যাপ্ত সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর চলাফেলা করতে সমস্যা হয়। এ ছাড়া হাতেগোনা কয়েকটি গণশৌচাগার থাকায় বিশেষত নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিভিন্ন সড়ক নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখায় নগর অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা হয়ে আছে।

গত এক সপ্তাহে নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের অর্ধশতাধিক এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, সুরমামার্কেট, লামাবাজার, চৌহাট্টা, মদিনামার্কেট, আম্বরখানা, শিবগঞ্জ, সোবহানীঘাট ও কদমতলী এলাকায় যানজট সবচেয়ে বেশি। গুরুত্বপূর্ণ এসব এলাকায় দিনভর থেমে থেমে যানজট লেগেই থাকে। এর ফলে নগরবাসীকে বাসা থেকে বের হলেই কয়েক দফা যানজটের কবলে পড়তে হয়।

সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ফয়সল মাহমুদ বলেন, সিলেটে যানজটের জন্য মূলত দায়ী অপরিকল্পিত নগরব্যবস্থা। যানবাহনের তুলনায় রাস্তা অপ্রতুল। অনেক রাস্তা ভাঙাচোরা। অনেক বিপণিবিতান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পার্কিং নেই। রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে হকাররা অবাধে ব্যবসা করেন। নেই কোনো সিগন্যাল বাতিও। তা সত্ত্বেও যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে। অবৈধ যানের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানও হয়।

নগরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশার উপদ্রব থাকলেও মশকনিধনের ওষুধ ছিটাতে সিটি কর্তৃপক্ষকে দেখা যায় না। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে নগরের বাগবাড়ি, ঘাসিটুলা, ঝালোপাড়াসহ অন্তত অর্ধশতাধিক এলাকায়। এ দুটি সমস্যায় অনেক এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ এখন চরমে পৌঁছেছে। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন এলাকা অনিয়মিতভাবে পরিষ্কার করায় নোংরা থাকে প্রায় সময়। সুরমা নদীর পাড়ে স্থানে স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে নগর নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়ে থাকে বলে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হানিফুর রহমান দাবি করেন।

সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (পানি) এনামুল হক তাপাদার জানান, কোনো এলাকাতেই পানির তীব্র সংকট নেই। শুধু বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে মাঝেমধ্যে পানি সরবরাহে সমস্যা হয়। তবে দৈনিক ৮ কোটি লিটার চাহিদার বিপরীতে সিটি কর্তৃপক্ষ নগরবাসীকে ৫ কোটি ৮০ লাখ লিটার পানি দিতে পারছে বলে তিনি জানান। অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করেন, নিয়মিতভাবে নগরে মশকনিধনে ওষুধ ছিটানো হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের ভাঙাচোরা রাস্তার মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে মদিনামার্কেট, পাঠানটুলা, রেলস্টেশন এলাকা, কুমারপাড়া সোবহানীঘাট ও উপশহর। রোদের সময়ে ভাঙাচোরা অংশে সারাক্ষণ ধুলা ওড়ে। তবে গতকাল দুপুরে এক দফা বৃষ্টিতে ভাঙাচোরা অংশ কাদাপানিতে একাকার হয়ে পড়েছে। এতে সড়কে চলাচলকারী মানুষ থেকে শুরু করে আশপাশের ব্যবসায়ীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, বন্যায় সিলেটের অধিকাংশ সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। নগরের ৯৭০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩৭৭ কিলোমিটারই বেহাল। তবে ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর করতে সিটি করপোরেশনের একাধিক প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments