
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ‘প্রতারণার মাধ্যমে’ নামের আগে ‘অধ্যাপক’ পদ ব্যবহার করছেন। এই নেতা মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ‘নিজের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে পকেট কমিটি’ গঠন করতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন।
জাকিরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন সিলেট মহানগরীর ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটির সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রব চৌধুরী জুয়েল। আজ শনিবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ আতিকুর রব চৌধুরী জুয়েল বলেন, ‘তৃণমূল আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ অক্টোবর নগরীর ৬নং ওয়ার্ডে বিতর্কিত একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরিতাপের বিষয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিল গণতান্ত্রিক পন্থায় কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে যেন প্রতিটি কমিটি গঠনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের নেতৃত্ব বেছে নিতে পারেন। কিন্ত আমরা কী দেখলাম?’
তিনি বলেন, ‘সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কথিত অধ্যাপক জাকির হোসেন সাহেব নিজের স্থার্থ হাসিল করতে তৃণমূলের ও ত্যাগী নেতাকমী্দের কোনো মূল্যায়ন না করে তার আত্মীর-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পকেট কমিটি গঠনে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন। কারণ আগামী সিলেট সিটি কর্পোরেশন নিবচিনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে অংশ নিতে আগ্রহী । তিনি চাচ্ছেন প্রতিটি ওয়ার্ডে নিজের আস্থাভাজন নেতৃতৃ নির্ধারণ করতে । এক্ষেত্রে তিনি কোনো কিছুই বাছবিচার না করে অযোগ্যদের পদ দিচ্ছেন। নিজের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে চলেছেন একের পর এক। তার এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সম্মেলনকালে কাউন্সিলরসহ প্রার্থীগণ ক্ষোভ ও বিদ্রোহ করেছেন। কোথাও কোথাও সম্মেলনস্থলে হামলা-ভাঙচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে এসেছে। এমন অবস্থার হাজারো নেতাকর্মীর প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
জুয়েল আরও বলেন, ‘আমাদের ৬নং ওয়ার্ডে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত নির্বাচনের কথা ছিল । কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বুঝতে পারেন ভোটের মাধ্যমে তার পছন্দের প্রার্থীকে বিজরী করানো যাবে না। তখন তিনি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের পছন্দের প্রার্থীদের পদে আনতে বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করা শুরু করেন। তিনি বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে এবং দল থেকে বহিষ্কারের হুমকিও প্রদান করেন। তিনি নেতাকমীদের সাথে পরামর্শ করা হয়েছে দাবি করে কাউন্সিলরদের বিভ্রান্ত করে নিজের পছন্দের নেতৃতৃ নির্বাচনের অপচেষ্টা চালান। সম্মেলনস্থলে তিনি দাবি করেন, আমরা নাকি মতামত প্রদান করেছি। অথচ তার সাথে আমাদের এমন কোনো কথাবার্তা হয়নি। তার কোনো অগণতান্ত্রিক প্রস্তাবকে সমর্থন দেইনি। বরং শেষমুহুর্ত পর্যন্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটের দাবি করেছি।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “আওয়ামী লীগ জাকির হোসেন নিজের স্বার্থ আদায়ের সম্মেলনের দিন জোরপূর্বক একটি কাগজে স্বাক্ষর নিতে চান। তিনি বলেন, স্বাক্ষর না করলে বহিষ্কার করে বের করে দিয়ে হাতে ‘লেম’ ধরিয়ে দেব। এমন হুমকিসূচক আচরণে আমিসহ কয়েকজন ভীত হয়ে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হই। তবে সভাপতি পদে অন্য প্রার্থী আবুল বশর হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী শেখ আব্দুর রহিম খোকন ও নাজমুল হোসেনের স্বাক্ষর না নিয়েই তার নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নাম ঘোষণা করেন । আমরা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বারবার ভোটের মাধ্যমে নেতৃতু নির্বাচনের দাবি জানালেও তিনি আমাদের মতামতকে মূল্যায়ন করেননি । তাই ৬নং ওয়ার্ডের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ সকল নেতৃবৃন্দের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ ও জোরালো দাবি রাখছি, জাকির হোসেনের পকেট কমিটি অবিলম্বে বাতিল করে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি প্রদান করুন।”
আতিকুর রব চৌধুরী জুয়েল আরও বলেন, ‘৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যে বিতর্কিত কমিটি জাকির হোসেন দিয়েছেন, এটি একটি নখদন্তহীন অথর্ব কমিটি। সভাপতি পদে যার নাম বলেছেন, তিনি আওয়ামী লীগ করেন বটে, তবে বয়সের ভারে ন্যুজ এবং দলের দুর্দিনে দলীর কোনো অনুষ্ঠানেই তাকে দেখা যায়নি। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জাকির যাকে মনোনীত করেছেন, সেই জাহিদুল হোসেন মাসুদ ৬নং ওয়ার্ডের ছাত্রলীগ, যুবলীগ পেরিয়ে এসে বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এতে সন্দেহ নেই । তবে তিনি সম্পর্কে জাকির হোসেনের ভাগ্না। মাসুদের আপন বড় ভাই শহীদুল হোসেন আহমদ মামুন ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং আসন্ন কাউন্সিলে ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি পদে প্রার্থী। আপন ছোটভাই মঞ্জু জামাতের রাজনীতির সাথে জড়িত।’
তিনি বলেন, “আমাদের অবস্থান খুব পরিষ্কার, নেত্রীর নির্দেশ মতো নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে হবে। একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে, যে গণতন্ত্রের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা সংগ্রাম করে গেছেন ও যাচ্ছেন সেই গণতান্ত্রিক চর্চা করতে হবে ।
আমাদের অবস্থান নীতি আদর্শ এবং নৈতিকতার পক্ষে । যা বঙ্গবন্ধু আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন । আমরা ‘মুজিব আদর্শ’ বুকে ধারণ ও লালন করি। সিলেট বিভাগে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদে জাকির হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ রাজপথে অনেকটা যেনো ছন্দ হারিয়েছে। তিনি দলের নেতাকর্মীদের মতামতকে উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছেমতোই দল চালাচ্ছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বারবার। করোনার দুঃসময়েও তিনি নেতাকর্মীদের কোনো খোঁজ-খবর নেননি। ঘরে থেকেই বের হননি।”
সংবাদ সম্মেলনে জুয়েল আরও বলেন, ‘জাকির হোসেন যে নীতি ও নৈতিকতাহীন মানুষ তা একটি উদাহরণ থেকেই পরিষ্কার হয়। তিনি প্রতারণার মাধ্যমে নামের আগে অধ্যাপক শব্দ ব্যবহার করে দলকেও বিভ্রান্ত করছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি অধ্যাপক নয়, শাহ খুররম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাত্র। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে পরিচিত হলেও ববন্ধুর প্রতি সম্মান না জানানোর কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে শোকজও করেছিলো । ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট কলেজে শোক দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকেননি। পদ আকড়ে থাকার নজিরও তিনি দেখিয়েছেন এই কলেজেই। ম্যানেজিং কমিটি সভা করে তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় । তবে তিনি অনেক দিনই সেই পদ জোর করে দখলে রাখেন।’