বাড়িবাংলাদেশেসিলেট বিভাগজামালগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডায়াগনস্টিক সিন্ডিকেটের দখলে। চিকিৎসা সেবা ব্যাহত।

জামালগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডায়াগনস্টিক সিন্ডিকেটের দখলে। চিকিৎসা সেবা ব্যাহত।

খন্দকার শহীদুল ইসলাম,সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি। 

 সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ৩১ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্থানীয় ডায়গনষ্টিক সেন্টার সংযুক্ত ফার্মেসির দালালরা দখল করে আছে।

উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (হাসপাতাল) ভেতর প্রতিদিন সেবা নিতে আসা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে রীতিমত জোর জবরদস্তি, টানাহেঁচড়া চালিয়ে থাকে ডায়গনষ্টিক সেন্টার সংযুক্ত ফার্মেসির নিয়োগকৃত দালালেরা। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এসব ডায়াগনস্টিক দালালদের দৌরাত্ম্য এখন চরমে। তাদের কথামতো পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ল্যাবে রোগ নির্ণয় না করালে এবং ডায়গনষ্টিক সেন্টার সংযুক্ত ফার্মেসি থেকে ঔষধ না কিনলে দালালরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে রোগী ও তার স্বজনদের প্রতি। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা জামালগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সিন্ডিকেট বানিয়ে জিম্মি করে রেখেছেন।

এনিয়ে অসহায় ভুক্তভোগী রোগী ও সাথে আসা স্বজনরা পরে চরম বিপাকে।

সরজমিন হাসপাতাল অভ্যন্তরে ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে, জামালগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা সহ ৮জন এমবিবিএস ডাক্তার কর্মরত আছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক নিয়োগকৃত কোনো কোনো এমবিবিএস ডাক্তার প্রায়ই চেম্বারে অনুপস্থিত থাকেন। তাদের পরিবর্তে সিপি পরিচিত কায়সার আহমেদ সাগর, আমিরুল ইসলাম, রেজাউল করিম শামীম (ডিএমএফ ইন্টার্নি) প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা এপর্যন্ত ডাক্তারের সহকারী হিসেবে রোগি দেখে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। তাই ডাক্তারের পরিবর্তে অনভিজ্ঞ সিপিরা চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকায় জটিল কোন প্রকার চেস্ট বা পরামর্শ প্রয়োজন হলে রোগিরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাছাড়া জরুরি বিভাগে ডাক্তারের পরিবর্তে যারা থাকেন তারাও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে তাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।তাই জরুরি বিভাগে হাত-পা মচকানো বা ভাঙ্গা বা প্লাস্টার করতে প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম হাসপাতালে নেই এরকম অজুহাতে জরুরি সেবা পেতে রোগিদের নিকটস্থ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়। এসব কাজে জরুরি বিভাগে তৎপর থাকা ডিএমএফ ইন্টার্ণি পরিচয়ের রেজাউল করিম শামীম ও ওয়ার্ড বয় সোহেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে দেখা গেছে, স্থানীয় নয়াহালট গ্রামের ও ছোট ঘাগটিয়া গ্রামের দুই মহিলা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)কথা বলছিলেন। তাদের রোগির ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্র কোন এক ফার্মেসি সংযুক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকেরা জোর করে নিয়ে গেছে।

এভাবেই প্রতিদিন সকাল ১০টা হতেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সন্নিকটে অবস্থান করা একাধিক ডায়গনষ্টিক সেন্টারের দালালরা নজরদারী করে থাকে ডাক্তারের চেম্বারে আসা রোগি ও তার স্বজনদের উপর। রোগির জন্য প্রেসক্রিপশন প্রস্তুত হওয়া মাত্রই নির্দেশিত বিভিন্ন টেস্ট করাতে ও সে অনুযায়ী তাদের ফার্মেসির ঔষধ ধরিয়ে দিতে প্রেসক্রিপশন নিয়ে বেপরোয়া দালালরা টানাটানি শুরু করে। ফুসলিয়ে নিয়ে যায় তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টার কাম-ফার্মেসিতে।

ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়োজিত দালালদের মধ্যে রয়েছে, স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের ভাগনা হুমায়ুন, নয়াহালট গ্রামের নিহাল মোর্শেদ অন্তর, আনোয়ার, কিশোরগঞ্জের প্রান্ত, লম্বাবাক গ্রামের মিছবাহ্, কামরুল, আউট সোর্সিং এর ওয়ার্ডবয় সোহেল, হাসপাতালে নিয়োজিত দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ইন্টার্নি পরিচয়ের থাকা এসএসিএমও রেজাউল করিম শামীম। এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রভাবশালী মালিকরা বিভিন্ন ভাবে প্রতিবাদকারীদের হাত-পা ভেঙ্গে ফেলার হুমকি ধামকি ভয় ভীতি দেখিয়ে তাদের অপকর্ম চালিয়ে থাকেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগি ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ৩১ শয্যাবিশিষ্ট একমাত্র সরকারি হাসপাতালটিতে প্রতিদিন চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা এসব দালালদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় সীমাহীন বিড়ম্বনা আর হয়রানি। যতই দিন যাচ্ছে ততই দালালের উৎপাত বেড়ে চলেছে। এসব দালালদের উৎপাতে হাওরাঞ্চলের রোগীও স্বজনেরা চরম বিরক্তি আর অস্বস্তি প্রকাশ করছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে চিকিৎসা সেবায় সম্পৃক্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কমপ্লেক্সের কতিপয় ব্যক্তি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের যোগসাজশে চিকিৎসা ব্যবসার কমিশন ভিত্তিক একটা প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘ দিন ধরে এসব উৎপাত চালিয়ে আডছে। দীর্ঘদিন ধরে এই সিন্ডিকেট একচেটিয়া ডায়াগনস্টিক ব্যবসা ও ঔষধ ব্যবসা করছে। ডাক্তার নির্দেশিত ডায়গনষ্টিক সেন্টার থেকে রোগ নির্ণয়ের পরিক্ষা-নিরীক্ষা করে সংযুক্ত ফার্মেসি থেকেই ঔষধ ক্রয়ে বাধ্য করতে দালালরা নানা রকম কৌশল অবলম্বন করে থাকে।

এদের নিয়ন্ত্রণ করে নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হাওরবাসী স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন।

এব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা. মঈন উদ্দিন আলমগীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আউটসোর্সিং ওয়ার্ডবয়, ইন্টার্নিসহ অন্যান্যরা আগে এক সময় ডাক্তার সংকট থাকায় নিয়োজিত ছিল। এখন যেহেতু নতুন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেহেতু তাদের আর প্রয়োজন নেই। অভিযোগের বিষয়ে তিনি জানান, এসব অভিযোগ আমি আগে থেকেই পেয়েছি, এখন আপনারাও বলেছেন। আপনারাও নিউজ করেন। আমি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments