বাড়িঅন্যান্যজেলা পরিষদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা বহিস্কার হচ্ছেন না

জেলা পরিষদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা বহিস্কার হচ্ছেন না

যে কোনো নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত আছে। কিন্তু জেলা পরিষদ নির্বাচনে তা কার্যকর হচ্ছে না। অর্থাৎ, জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা বহিস্কার হচ্ছেন না। তবে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরিচিতি পাবেন।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা সমকালকে জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান পদে ২৬টি জেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জেলায় দলীয় প্রার্থীদের বিজয় প্রায় নিশ্চিত। ওই সব জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বীদের অবস্থান খুব একটা সংহত নয়। এ কারণেই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছাড় দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁদের বহিস্কার করা হচ্ছে না। তবে আগামীতে যে কোনো নির্বাচনে মনোনয়নের বেলায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকবেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

এদিকে রাজশাহী ও রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ দলের দু’জন বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে বহিস্কারের সুপারিশ করেছে। তাঁরা হচ্ছেন- রাজশাহী জেলা শাখার ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান আক্তার এবং রংপুর জেলা শাখার উপদেষ্টা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এই সুপারিশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। ওই বৈঠকের দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী ৪ অক্টোবর মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে দেশে ফিরবেন। এরপর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকার প্রস্তুতি রয়েছে।

কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিস্কার নিয়ে আওয়ামী লীগে দুই ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। বিদ্রোহীদের অনেকেই সাংগঠনিক পদ-পদবিতে নেই। তাঁদের পদ থেকে বহিস্কারের সুযোগ নেই। আবার অনেকেই দলের কাছে মনোনয়ন না চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের বহিস্কার করা নিয়েও দলের ভেতরে কিছুটা মতভেদ রয়েছে। এই অবস্থায় যে কোনো নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেই দল থেকে বহিস্কারের আগাম সিদ্ধান্ত থাকলেও সাংগঠনিক এই শাস্তি কার্যকর হচ্ছে না জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বেলায়।

এদিকে কমপক্ষে ২৫টি জেলায় দলীয় প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে স্থানীয় নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। বগুড়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ। তিনি রেলওয়ের একজন কর্মচারীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর এবং রেলওয়ে মার্কেটে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার নামে ১৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আলাদা দুটি মামলায় কারাগারে আটক রয়েছেন। মেহেরপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রসুল। তিনি গত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয় পেয়েছিলেন।

নড়াইলে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু এবং লোহাগড়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ। খুলনায় বিদ্রোহী হয়েছেন দু’জন। তাঁরা হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. শেখ বাহারুল আলম এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এসএম মোর্ত্তজা রশিদী দারা। এ দুই নেতা অবশ্য দলীয় মনোনয়ন চাননি। এ জন্য তাঁরা নিজেদের বিদ্রোহী প্রার্থী মনে করছেন না। ময়মনসিংহে দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য নূরুল ইসলাম রানা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

সাতক্ষীরায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করেছিলেন। এবার তিনি দলের সমর্থন পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলুল্যাহ ঝড়ূ। তিনি দলের কোনো পদ-পদবিতে নেই। শেরপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী দু’জন। তাঁরা হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির রুমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জাকারিয়া বিষু। নেত্রকোনার বিদ্রোহী প্রার্থী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবু সাঈদ খান জ্যোতি।

কিশোরগঞ্জে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হামিদুল আলম চৌধুরী নিউটন ও স্থানীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আশিক জামান এলিন। তবে তাঁরা আওয়ামী লীগের কেউ নন বলে দাবি করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমএ আফজল। গাজীপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোকছেদ আলম ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী শামসুদ্দিন খন্দকার। নোয়াখালীতে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়ছেন কবিরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আলাবক্স তাহের টিটু।

নরসিংদীতে দলীয় প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রার্থী হয়েছেন মনির হোসেন ভূঁইয়া ও সৈয়দ মাহমুদ জাহান লিটু। এর মধ্যে মনির হোসেন ভূঁঁইয়া জেলা আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হিরু বীরপ্রতীক এমপির সাবেক এপিএস। তিনি দলের মনোনয়ন চাননি বলেই নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনে করছেন। সৈয়দ মাহমুদ জাহান লিটু আওয়ামী লীগ ঘরানার। সুনামগঞ্জে এবারও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুল হুদা মুকুট। গত নির্বাচনে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করেছিলেন। ফরিদপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন শাহাদাৎ হোসেন।

রাজবাড়ীতে পাংশা পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দীপক কুণ্ডু বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত কালুখালী উপজেলার চেয়ারম্যান আলিউজ্জামান চৌধুরী টিটোর ছোট ভাই ইকরাজ্জামান চৌধুরী রিটো স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন শফিকুল আলম। তিনি জেলা পরিষদের বিদায়ী চেয়ারম্যান।

গত নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করায় বিদ্রোহের শাস্তি পেয়েছেন ৯ জন জেলা পরিষদ প্রশাসক। এবার তাঁরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয় পাওয়া জেলা পরিষদের বিদায়ী এই চেয়ারম্যানরা হচ্ছেন রাজশাহীর মোহাম্মদ আলী সরকার, মেহেরপুরের গোলাম রসুল, চুয়াডাঙ্গার শেখ শামসুল আবেদীন খোকন, নড়াইলের অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, পিরোজপুরের মহিউদ্দিন মহারাজ, জামালপুরের ফারুক আহমেদ চৌধুরী, শেরপুরের হুমায়ন কবির রুমান, সুনামগঞ্জের নুরুল হুদা মুকুট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সফিকুল আলম।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments