
বিকট শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে নিচ দিয়ে টানানো বিদ্যুৎ লাইনের ওপর এক তরুণীকে কাতরাতে দেখেন। পরে তাঁকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
ঘটনাটি ঘটেছে আজ শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জয়চণ্ডী ইউনিয়নে। ওই তরুণীর নাম সিপা বেগম (১৮)। তিনি পার্শ্ববর্তী জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের রাণীমোড়া এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর জামাল মিয়ার মেয়ে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জয়চণ্ডী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) বিদ্যুতের লাইন টানানো রয়েছে। আজ বেলা আড়াইটার দিকে জয়চণ্ডী ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের পূর্ব দিকে হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। লোকজন এগিয়ে গিয়ে টিলার নিচ দিয়ে টানানো বিদ্যুতের লাইনের ওপর এক তরুণীকে কাতরাতে দেখতে পান। লাইনের পাশের খুঁটিতে সার্কিট ব্রেকার থাকায় ওই সময় লাইনের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। লোকজন তরুণীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কুলাউড়া থানার পুলিশকেও জানানো হয়। পরে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে তরুণীর সঙ্গে কথা বলে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হয়।
জয়চণ্ডী ইউনিয়নের বাসিন্দা এমএ আহাদ সেলফোনে বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ কিছু লোক ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় প্রত্যক্ষদর্শী এক শিশু তাঁদের জানায়, ওই তরুণীর সঙ্গে আরেক তরুণী ও দুই তরুণ ছিলেন। তাঁরা নির্জন টিলার ওপর বসে গল্প করছিলেন। হঠাৎ এক তরুণ তরুণীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। তরুণী গড়িয়ে নিচে পড়ে যান। এরপর ওই তরুণীর সঙ্গীরা পালিয়ে গেছেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পড়ে থাকা তরুণী সিপা জানান, এক সপ্তাহ আগে জীবন নামের একটি ছেলের সঙ্গে ফোনে পরিচয় হয়। ঈদের আগে জুড়ী থেকে কুলাউড়া শহরে গিয়ে তরুণের সঙ্গে দেখা করেন। আজ দুপুরে খালাতো বোনের সঙ্গে আবার জুড়ী থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে কুলাউড়ার জয়চণ্ডী এলাকায় জীবনের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। জীবনের সঙ্গে আরেকটি ছেলে ছিল। জীবন তাঁদের স্থানীয় গাজীর মোকাম নামে পরিচিত একটি মাজারে নিয়ে যান। মাজারটি টিলার ওপর অবস্থিত। এরপর কীভাবে কী হলো আর বলতে পারেন না।
গুরুতর অবস্থায় বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ওই তরুণী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পড়ে ছিলেন। কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, তরুণীর বুক, পিঠ ও পেটের কিছু স্থান পোড়া দেখা গেছে। শরীরের ২০ থেকে ২২ শতাংশ পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তরুণীকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মহসীন সন্ধ্যার দিকে বলেন, দুই তরুণীর সঙ্গে দুই তরুণের প্রেমের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বিদ্যুতায়িত হয়ে আহত তরুণীর সঙ্গে খালাতো বোন ছিলেন জানা গেছে। কেন তাঁরা জয়চণ্ডী এলাকায় গেলেন, কীভাবে নিচে পড়লেন সে ব্যাপারে তরুণী কিছুই বলতে পারেননি। তাঁর স্বজনদের ফোনে ঘটনাটি জানানো হয়েছে। তাঁরা এসে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে রাত ৮টার দিকে জরুরি বিভাগে খোঁজ নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সোহেল আহমেদ জানান, তরুণীর এক অভিভাবক এসে তাঁকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। তবে এ ব্যাপারে এখনো থানায় কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি।