বাড়িবাংলাদেশেধর্মপাশায় মুহতামিমের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ,,

ধর্মপাশায় মুহতামিমের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ,,

অনুপ তালুকদার ধর্মপাশা, মধ্যনগর সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় “জামিয়া দেওয়ানগঞ্জ নূরুল কোরআন কওমি মাদ্রাসার” মুহতামিম মুফতি আশরাফ আলীর বিরুদ্ধে মাদ্রাসার টাকা আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার বিকেলে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের জিংলিগড়া গ্রামের বাসিন্দা একলেমুর রেজা আকন্দ বাদি হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে এ লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেছেন।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের সুনুই গ্রামের বাসিন্দা মৃত দেওয়ান আলীর দানকৃত ২ একর জায়গায় একই ইউনিয়নের আলতাবপুর এলাকায় ২০০৮ সালে তাঁরই নামানুসারে “জামিয়া দেওয়ানগঞ্জ নূরুল কোরআন কওমি মাদ্রাসাটি” প্রতিষ্টা করা হয়। আর ওই কওমি মাদ্রাসাটি প্রতিষ্টালগ্ন থেকেই প্রতিষ্টানটির মুহতামিমের দায়িত্ব পালণ করে আসছেন মুফতি আশরাফ আলী। বর্তমানে ও মাদ্রাসাটিতে ৬০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। আর কর্মরত শিক্ষক রয়েছেন ২৪ জন।
অভিযোগে আরোও উল্লেখ, মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি আশরাফ আলী এ মাদ্রাসাটি প্রতিষ্টা করার পর থেকেই তিনি প্রায় ১৫ বছর যাবত প্রতিষ্টানটির মুহতামিমের পদটি আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। এ মাদ্রাসাটি পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর কথাই যেন শেষ কথা। আর তখন থেকেই তিনি উক্ত প্রতিষ্টানটি পরিচালনা করার জন্য একটি পকেট কমিটি করে তিনি নিজের ইচ্ছেমতো মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। এ ছাড়াও তিনি, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দিয়ে তাঁর নিজের গরুর জন্য ঘাস কাটানো, নিজের পরিবারে কাপড় ধোয়ানোসহ তাঁর ব্যক্তিগত ও পরিবারের যাবতীয় কাজ করানোসহ নানা অনিয়ম কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এ পর্যন্ত মাদ্রাসার আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাবও কমিটির কাছে দেননি। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবত এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। পরে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক ইকবালের হস্তক্ষেপে এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্থানীয় তিনজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ৭ সদস্য বিশিস্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। পরে উক্ত তদন্ত কমিটি দীর্ঘ ১৫ দিন প্রতিষ্টানটির আয়-ব্যয়সহ সার্বিক বিষয়াদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁরা মাদ্রাসার আয়-ব্যয়ের হিসাবে প্রায় ৮ লাখ টাকার গরমিল পান। তবে মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি আশরাফ আলী এ হিসাব তিনি মেনে নিতে রাজি নন। এ অবস্থায় এলাকাবাসীর পক্ষে বিষয়টি সমাধানের জন্য একলেমুর রেজা আকন্দ বাদি হয়ে বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের বিষয়ে মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি আশরাফ আলী তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে বলেন, অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তিল তিল করে এই প্রতিষ্টানটিকে আমি এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। বর্তমানে এ প্রতিষ্টানটিকে এলাকার সবচেয়ে বড় একটি কওমি মাদ্রাসায় পরিনত করা হয়েছে। আর আয়-ব্যয়ের হিসাবের বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করে হিসাব-রক্ষকের উপর। মূলত একটি বিশেষ মহল এখান থেকে আমাকে সড়ানোর জন্যই তাঁরা আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো.আল্লাদ মিয়া বলেন, আমার পিতার দানকৃত ২ একর জায়গায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে এ মাদ্রাসাটিতে গড়ে তোলার পিছনে সম্পূর্ণ অবদান একজনেরই। আর তিনি হলেন, মুহতামিম মুফতি আশরাফ আলী সাহেব। মূলতই এত অল্প সময়ের মধ্যে এই প্রতিষ্টানটিকে এ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াটা একটি মহল মেনে নিতে পারছেনা। তাই তাঁকে এখান থেকে তাড়ানোর জন্যই এ ষড়যন্ত্র শুরু করা হয়েছে। তবে উপরওয়ালা সব দেখছেন। ভাল মন্দের হিসাব তিনিই করবেন।
উপজেলার পাইকুরাটি ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক ইকবাল বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে ওই মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি আশরাফ আলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ শুনে আসছি। এ মাদ্রাসাটি পরিচালনা করার ক্ষেত্রে তিনি স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গসহ কাউকেই পাত্তা দেননি। আর তাঁর বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ তদন্ত করার জন্য গঠিত ৭ সদস্য বিশিস্ট তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও ৮ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমান পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি এ বিষয়টিকে পাত্তা দিচ্ছেননা। তাই এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শীতেষ চন্দ্র সরকার অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।###

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments