
মোঃ কামরুল হাসান, স্টাফ রিপোর্টার,কক্সবাজার।
ভোটার হওয়ার জন্য কিংবা একটি চাকরি পাওয়ার জন্য যেখানে একজন প্রকৃত বাংলাদেশী নাগরিকের কাছে স্বপ্নের মত সেখানে অর্থ ও জালিয়াতির মাধ্যমে হয়ে গেছেন রামু রশিদ নগর ইউনিয়নের ভোটার এবং অর্থের বিনিময়ে ভাগিয়ে নিয়েছেন জোয়ারিয়ানালা এইচ এম সাঁচি উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটরের পদ। এমনকি এমপিওভুক্তির জন্য সুপারিশ করেছেন তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন সচেতন অভিভাবক জানান,
জোয়ারিয়ানালা হাজী মোহাম্মদ সাঁচি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক একজন রোহিঙ্গা নাগরিক কে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে উক্ত চাকুরির রেফারেন্স দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র পেতে সহযোগিতা করেছেন। ঘটনার বিবরণ নিম্নরূপ –বিদ্যালয়ে ২০২২ সালের ১১ আগস্ট কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। মোট ৭ জন আবেদন করেন। ১ জন প্রার্থীর আবেদন ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় বাতিল করা হয়। বাকি ৬ জনের মধ্যে ৩ জন কে দিয়ে ডামি বোর্ড সাজিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেন। উক্ত সাজানো নিয়োগ পরীক্ষায় আব্দুল কাইয়ুম নামক প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়। ডকুমেন্টস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, উক্ত আব্দুল কাইয়ুম পার্শ্ববর্তী রশিদ নগর ইউনিয়নের বাসিন্দা। আবেদন কালে তার বয়স ২৫ বছর হলেও তিনি বাংলাদেশী নাগরিক প্রমাণে জাতীয় পরিচয় পত্র জমা দিতে পারেন নি। কেননা ইতোপূর্বে তিনি জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করলেও স্থানীয়দের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার আবেদন বাতিল হয়। শুধুমাত্র জন্ম নিবন্ধন ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক ইস্যুকৃত জাতীয়তা সনদ দিয়ে আবেদন করেন। অপরাপর ৩ জন আবেদনকারীদের সাথে কথা বলে জানতে পারি, তাদের আবেদন গ্রহণ করলেও তাদেরকে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ও সময় অবহিত করা হয় নি যা ১৬/১১/২০২২ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান শিক্ষক জনাব আজিজুল হক তার পূর্বনির্ধারিত প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য এমন কারসাজি করেন। ২১/১১/২০২২ তারিখে প্রধান শিক্ষক জনাব আজিজুল হক আব্দুল কাইয়ুম বরাবর নিয়োগপত্র ইস্যু করেন। ২৮/১১/২০২২ তারিখে আব্দুল কাইয়ুম যোগদান করেন। প্রধান শিক্ষক ০৬/১২/২০২২ তারিখে এমপিও এর জন্য আবেদন ফরোয়ার্ড করেন। ০৯/১২/২০২২ তারিখে আঞ্চলিক উপপরিচালক চট্টগ্রাম এর দপ্তর থেকে অপর্যাপ্ত ডকুমেন্টস(জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকা) এর অজুহাতে এমপিও আবেদন রিজেক্ট করা হয়। এরই মধ্যে আব্দুল কাইয়ুম পুনরায় নিজেকে এলাকার বাহিরে থাকার কারণে বাদ পড়েন দাবি করে বিশেষ বিবেচনায় জাতীয় পরিচয় পত্র পাওয়ার আবেদন করেন যেখানে তিনি নিজেকে চাকুরীজীবী উল্লেখ করেন। আবেদনে ০২/১১/২০২২ তারিখে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইস্যুকৃত জাতীয়তা সনদ সংযুক্ত করেন। তার কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে জমা দেয়া জাতীয়তা সনদ ও জাতীয় পরিচয় পত্রের আবেদনে দেয়া জাতীয়তা সনদ একই ব্যক্তি কর্তৃক ইস্যু করা হলেও স্বাক্ষর সম্পূর্ণ ভিন্ন। ১৫/০১/২০২৩ তারিখে আব্দুল কাইয়ুম এর তথ্য যাচাই – বাছাই প্রতিবেদন দেয়া হয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এর ডাটা এন্ট্রি প্রুফ কপি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, পিতা ও মাতা কারও জাতীয়তা সনদ নেই। এতদসত্তেও আব্দুল কাইয়ুম জাতীয় পরিচয় পত্র পেয়ে যান। বিগত সরকারের স্থানীয় সাংসদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক কে কাজে লাগিয়ে প্রধান শিক্ষক জনাব আজিজুল হক মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসে তদবির করে জাতীয় পরিচয় পত্র পেতে সহযোগিতা করেছেন বলে এলাকায় প্রচার আছে যা রাষ্ট্র দ্রোহের সামীল । আব্দুল কাইয়ুম এর জাতীয় পরিচয় পত্র অনলাইন হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক ০১/০৬/২৩ এ এমপিও ভুক্তির জন্য পুনরায় আবেদন করেন এবং জুলাই ২০২৩ এ এমপিও ভুক্ত হন। এতে বেতন ভাতা খাতে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২৫৬৫০১/=( দুই লক্ষ ছাপ্পান্ন হাজার পাঁচ শত এক টাকা )। এ বিষয়ে আমরা আব্দুল কাইয়ুম এর কাইয়ুম এর তথ্য যাচাই – বাছাই প্রতিবেদনে স্বাক্ষরকারী জন – প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উক্ত স্বাক্ষর তাদের নয় এবং তা জাল বলে দাবি করেন। একই সাথে রশিদ নগর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জনাব আবদুল মালেক মাসুম জালিয়তির আশ্রয় নিয়ে করা জাতীয় পরিচয় পত্র বাতিলের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেন।
এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হককে ফোন করলে জানান , বর্তমানে তিনি দায়িত্বে নেই, কাইয়ুম যে রোহিঙ্গা সেটি পরে জানতে পেরেছেন কিন্তু নিয়োগের সময় আইডি কার্ড জমা না দিলেও সময় দেওয়া হয় যা পরবর্তীতে জমা দেন। টাকা লেনদেনের মাধ্যমে কাইয়ুমের নিয়োগ বিষয়টি অস্বীকার করেন, প্রমান আছে বললে ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দেন।
রশিদ নগর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মাসুম বলেন, কাইয়ুমের বাবা মা রোহিঙ্গা কিন্তু সে এখানে বড় হয়েছেন। জালিয়াতি করে ভোটার হয়েছেন তাই আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য ইউএনও এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি।
অভিযুক্ত কাইয়ুমকে দুইটি নাম্বারে একাধিক বার ফোন করলে রিসিভ করেননি।