বাড়িচট্টগ্রাম বিভাগচট্টগ্রাম জেলাসন্দ্বীপে বাড়ছে আখ চাষি - ভাদ্রে তাদের মুখে হাসি

সন্দ্বীপে বাড়ছে আখ চাষি – ভাদ্রে তাদের মুখে হাসি

রিদুয়ানুল বারী (সন্দ্বীপ) প্রতিনিধি

সন্দ্বীপ উপজেলায়  চলতি ২০২৪ -২৫  মৌসুমে আখের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর ফলনও এসেছে বেশ ভালো। গাছ রোপণ থেকে এখন সাত মাস চলে আগামী ২ মাসের মধ্যে বিশেষ করে ভাদ্রে আখ বাজারে উঠবে। আখের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হলো কার্ত্তিক ও অগ্রহায়ণের মাঝামাঝিতে। এক সময় সন্দ্বীপের মানুষের আখ চাহিদা পুরণ করতে বাহির থেকে সন্দ্বীপে আখ আসতো। বিগত কয়েক বছর তা কম দেখা যাচ্ছে । কৃষি বিভাগ ও প্রান্তিক আখ চাষিরা জানান সন্দ্বীপের জমি উর্বর হওয়াতে এখানে আখের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেথা দিয়েছে, সাধারণত  প্রতি তিন হাত পরপর মাটি কেটে উঁচু জমিতে আঁটি তৈরি করতে হয়। আঁটি তৈরির কয়েকদিন পর বিভিন্ন সার ও ওষুধ যেমন- পটাশ, ফসফেট, বাসুডিন ও গোবর একত্রে মিশিয়ে আঁটিতে পরিমাণমতো ছিটিয়ে দিতে হয়। এর পর মাটিকে কোদাল দিয়ে আলতো করে কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে পানি প্রয়োগের পর প্রতি এক হাত অন্তর একটি করে আখের চারা লাগানো হয়। একমাস পর আগাছা পরিষ্কার করে পুনরায় মাটি ঝুরঝুরে করতে হয় এবং প্রতি তিনমাস পর পুনরায় আগাছা পরিষ্কার করে আখের আঁটিতে উত্তমরূপে মাটি দিতে হয়। এরপর প্রতিমাসে এক থেকে দু’বার করে শুকিয়ে যাওয়া পাতা পরিষ্কার করতে হয়। এ ছাড়া ঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আখ সুরক্ষিত রাখতে চার হাত পরপর বাঁশের কঞ্চি পুঁতে আখগুলোকে শক্তভাবে বেঁধে দেয়া হয়। প্রায় ১০ মাস পর শ্রাবণের শেষ বা ভাদ্রের শুরুর দিকে জমি থেকে উৎপাদিত আখ কেটে বাজারে বিক্রয় করা হয়।

সন্দ্বীপ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষি জমি পরিদর্শন করে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে সন্দ্বীপের  মাটি ও আবহাওয়া আখ চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে আখ চাষের বাড়ছে। গত বছর এক’শ আখ মানভেদে বিক্রি হয়েছে দেড় হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। এবছর সেই আখ বিক্রি হওয়ার আশাবাদ  হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫’শ টাকা পর্যন্ত।

সন্দ্বীপ উপজেলায় এ বছর

৩০ হেক্টর জমিতে এ বছর আখ চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১.৫ হেক্টর জমিতে গবেষণা প্লট স্থাপন করা হয়েছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও পোকা মাকরের আক্রমণ কম হওয়ায় আখের ফলন সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তারা।

গাছুয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের  কৃষক সোহরাব(৩৫) বলেন আমি আজ ৫ বছর পর্যন্ত  ১০ কাঠা জমিতে আখ চাষ করি মোটামুটি লাভবান হচ্ছি, একই সাথে তার জমির পাশে আরো কয়েকজন কৃষকদের সাথে কথা হয়  মোস্তফা( ৫০) ১২ কাঠা , সাহাবউদ্দীন  (৬০) ১৬ কাঠা , ইকবাল (৩০) ১০ কাঠা  ,  মইনউদ্দীন( ৪০) ১২ কাঠা   , আবুল খায়ের (৫৫) ৭ কাঠা , রিদোয়ান (৪০) ১২ বিঘা , জমিতে আখ চাষ করে সফলতা দেখার পাশাপাশি অন্যরা ও এ চাষে এগিয়ে আসছেন।

সন্দ্বীপ উপজেলা কৃষি অফিসার মারুফ হাসান বলেন

দেশের একটি অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল৷ পাট ও তামাকের মতো আখও চাষীদেরকে নগদ অর্থে লাভবান করতে সহায়তা করে। আজকাল পাট চাষের চেয়ে আখ চাষ অধিক লাভজনক বলে চাষীরা পাটের চেয়ে আখ চাষেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ দেশের  প্রতিটি জেলাতেই কিছু না কিছু আখের চাষ হয়, তবে জলবায়ুর প্রভাব অনুযায়ী দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো আখ চাষের জন্য উপযোগী হলেও সন্দ্বীপ উপজেলায় আখ চাষ নিয়মিতই হচ্ছে।এ উপজেলার আবহাওয়া ও মাটি আখ চাষের উপযোগী।

এছাড়াও বোরো মৌসুমে সেচের পানির অভাবে বোরো ধান চাষ না হওয়ায় সেই জমিতে আখের চাষ লাভজনক।

এবং সন্দ্বীপ উপজেলায় আখের জমিতে সাথী ফসল চাষের ফলে জমির শস্য নিবিড়তা বেড়ে যাচ্ছে যা ইতিবাচক। তবে আখ চাষিরা জানান প্রাকৃতিক বিভিন্ন বিপর্যয়ে অনেক সময় আখ চাষিরা বিপদে পড়ে যান।তাই এ ক্ষেত্রে যদি সরকারিভাবে সহায়তা পাওয়া যায় তাহলে মনোবল নিয়ে  আরো ব্যাপক ভাবে আখ চাষ করে অর্থনৈতিক  সমৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments