বাড়িসিলেট বিভাগমৌলভীবাজার জেলাসরকারী যাকাত ফান্ডে যাকাত আদায়ের লক্ষ্যে সেমিনার। সদরুল ইসলাম মাসুম কমলগঞ্জ. মৌলভীবাজার

সরকারী যাকাত ফান্ডে যাকাত আদায়ের লক্ষ্যে সেমিনার। সদরুল ইসলাম মাসুম কমলগঞ্জ. মৌলভীবাজার

কমলগঞ্জ(মৌলভীবাজার)নিজস্ব প্রতিনিধি
মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ উপজেলা ইসলামি ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত সরকারি  ফান্ডে জাকাত আদায়ের লক্ষ্যে সেমিনার। কমলগঞ্জ উপজেলা ইসলামি ফাউন্ডেশন অফিস ইনচার্জ   ইকবাল হোসাইন স্যার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উক্ত অনুষ্ঠানে ইকবাল হোসাইন  বক্তব্যে বলেন। জাকাত ইসলামের প্রধান আর্থিক ইবাদত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত আদায় করো। তোমরা নিজের জন্য পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: চান্দ্র বছরান্তে উপযুক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সম্পদশালী মুসলিম নর-নারীর নেসাবভুক্ত সম্পদের ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রদান করাকে ইসলামের পরিভাষায় জাকাত বলা হয়। 
জাকাত বছরে একবার আদায়যোগ্য ইবাদত হলেও সাধারণত তা রমজান মাসেই আদায় করা হয়। প্রথমত, রমজানে জাকাত আদায় করলে জাকাতের মাধ্যমে সহানুভূতি প্রকাশ করা যায়। দ্বিতীয়ত, রমজানের কারণে বেশি মাত্রায় নেকি পাওয়া যায়। তৃতীয়ত, জাকাত আরবি বর্ষ হিসেবে আদায় করতে হয়। সাধারণত রমজান ছাড়া অন্য আরবি মাসের হিসাব-নিকাশ অতটা জানা থাকে না। 
জাকাতের তাৎপর্য
জাকাত ধনীদের সম্পদে গরিব-অসহায়দের অধিকার। এ জন্য জাকাত দাতাদের নিজ দায়িত্বে জাকাতের সম্পদ জাকাতগ্রহীতাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তাদের (ধনীদের) ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার।’ (সুরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ১৯)
জাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ পবিত্র ও বরকতময় হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের সম্পদ থেকে জাকাত গ্রহণ করো, যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে ও বরকতময় করতে পারো এর মাধ্যমে। আর তুমি তাদের জন্য দোয়া করো, নিশ্চয়ই তোমার দোয়া তাদের জন্য সান্ত্বনাস্বরূপ। বস্তুত আল্লাহ সবকিছুই শোনেন, জানেন।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১০৩)
জাকাত মূলত সম্পদ ও মনের পরিশুদ্ধির জন্য। কোনো ব্যক্তি তাঁর কাছে জমে থাকা সম্পদ একান্ত তাঁরই যেন মনে না করে। জাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ জমানোর লোভ ত্যাগ করা হয় এবং আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ পায়। সেই সঙ্গে সম্পদ বৃদ্ধির সুযোগ নেওয়া যায়। কারণ, জাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি পায়। সম্পদের অধিকারী সবাই জাকাত প্রদান করলে দেশের অর্থনীতি অন্য রকম হতে পারত। ধনী ও গরিবের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হতো না। পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় ধনী ও গরিব আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তার অর্থ এই নয় যে, একজন সম্পদের পাহাড় গড়বে আর অন্যজন খাবারের জন্য কুকুরের সঙ্গে লড়াই করবে। বরং পৃথিবীর সব মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য যা দরকার আল্লাহ তা সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিত রূপে সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা কামার, আয়াত: ৪৯)
সুষম বণ্টনের অভাবে ধনী ও গরিবের মধ্যে এমন বৈষম্য সৃষ্টি হয়। জাকাত এই বৈষম্য দূর করে সুষম বণ্টনের মাধ্যমে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করে। 
জাকাতের বিধিবিধান
জাকাতের নেসাব হলো, সাড়ে সাত ভরি (৮৭ দশমিক ৪৫ গ্রাম) সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি (৬১২ দশমিক ১৫ গ্রাম) রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ, বন্ড, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, ব্যাংকে জমাকৃত যেকোনো ধরনের টাকা, ফিক্সড ডিপোজিট হলে মূল জমা টাকা অথবা সমমূল্যের ব্যবসার পণ্য থাকলে জাকাত আদায় করতে হবে।
স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও বুদ্ধিসম্পন্ন মুসলিম নর-নারী যাঁর কাছে ঋণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও প্রয়োজনীয় খাদ্য-বস্ত্রের অতিরিক্ত সোনা, রুপা, নগদ টাকা, প্রাইজবন্ড, সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস, শেয়ার ও ব্যবসায়িক সম্পত্তির কোনো একটি বা সবকটি রয়েছে, যার সমষ্টির মূল্য উল্লিখিত নেসাব পরিমাণ হয়, তিনিই সম্পদশালী। এই পরিমাণ সম্পদ এক বছর স্থায়ী হলে বা বছরের শুরু ও শেষে থাকলে বছর শেষে জাকাত দিতে হবে।
পবিত্র কোরআনের সুরা তাওবার ৬০ নম্বর আয়াতে জাকাতের খাত হিসেবে আট শ্রেণির লোকের কথা বলা হয়েছে। যথা:
ফকির—যার মালিকানায় জাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই, যদিও সে কর্মক্ষম বা কর্মরত হয়।
মিসকিন—যার মালিকানায় কোনো ধরনের সম্পদই নেই।
আমিল—জাকাত উশুলকারী; ইসলামি রাষ্ট্রের বায়তুল মাল কর্তৃক জাকাত সংগ্রহে নিয়োজিত কর্মকর্তা।
নওমুসলিমদের পুনর্বাসনের জন্য জাকাত দেওয়া যায়।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যাঁর এই পরিমাণ ঋণ রয়েছে যে, ঋণ আদায় করার পর তাঁর কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকে না।
আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তি। যেসব মুসলমান যুদ্ধে, জ্ঞানার্জনে কিংবা হজের পথে রয়েছেন এবং তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থসম্পদ নেই।
মুসাফির—কোনো ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও কোথাও সফরে এসে সম্পদশূন্য হয়ে পড়লে, সে বাড়িতে পৌঁছাতে পারে—এমন পরিমাণ জাকাত প্রদান করা যাবে। 
উল্লিখিত সব খাতে অথবা যেকোনো একটি খাতে জাকাত প্রদান করলে জাকাত আদায় হয়ে যাবে। এর বাইরে অন্য কোনো খাতে জাকাত প্রদান করলে জাকাত আদায় হবে না। নিকটাত্মীয়দের জাকাত দেওয়া উত্তম। তবে সন্তান বা তার অধস্তনকে, মা-বাবা বা তাঁদের ঊর্ধ্বতনকে এবং স্বামী-স্ত্রীকে জাকাত দেওয়া যায় না। মহানবী (সা.)-এর বংশের কাউকে জাকাত দেওয়া যায় না।
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments