
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিলেট জেলার কোয়ারি এবং নদী গুলো থেকে অবৈধ ভাবে বালু-পাথর উত্তোলন ঠেকাতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নবাগত পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন।
গত ৩০ আগস্ট তিনি সিলেট জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দিয়েছেন। ২৫তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা এর আগে ফেনীর এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সিলেটের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে সম্প্রতি একটি দৈনিক পত্রিকায় সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এসপি মামুন।
পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার স্বার্থে সিলেটের পাথর কোয়ারি গুলোয় কয়েক বছর ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ আছে। তবে অভিযোগ আছে, রাতের অন্ধকারে অনেকে পাথর কোয়ারি থেকে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করছে।
এ বিষয়ে এসপি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত ৫ বছরে অবৈধ বালু উত্তোলন ও পাথর কোয়ারি প্রতিরোধে জেলা পুলিশ বিভিন্ন ধারায় ৫৩টি মামলা নিয়েছে। এর মধ্যে ৫১টি অভিযোগপত্র দেওয়ার মাধ্যমে পুলিশি কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি রাতেই আমাদের রাত্রিকালীন পাহারা থাকে এসব প্রতিরোধের জন্য।
তিনি আরও বলেন, সিলেটের এসব পাথর কোয়ারি কেন্দ্রিক কিছু অসাধু ও শ্রমজীবী মানুষ অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন চালিয়ে যেতে নানা ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা অত্যন্ত শক্ত অবস্থানে আছি। তা ছাড়া জেলা প্রশাসনের ভূমিকা, পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা সহ অন্যান্য সংস্থার ভূমিকা আছে। তাদেরও আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে এবং তারা আসছেও। পুলিশ যখনই অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলনের সংবাদ পায়, দ্রুততম সময়ে সে স্থানে যায় এবং আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
উল্লেখ্য, ‘পাথরশূন্য’ উল্লেখ করে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর কোয়ারিতে ৫ বছর আগে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে সম্প্রতি সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সেখান থেকে একাধিক চক্র দিন-রাত অবাধে পাথর উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক সময় সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের অংশ থেকেও উত্তোলন করা হয় পাথর। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের নিরব থাকার অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছু দিন ধরে একটি পাথর খেকো চক্র শ্রীপুর কোয়ারির জিরো লাইন ১২৮০ নং মেইন পিলার অতিক্রম করে অন্তত ৩০ হতে ৫০ গজ অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ভারতের ভূখণ্ড এবং বাংলাদেশের অংশ হতে পাথর আহরণ করছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রাজনীতিবীদ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সীমান্ত রক্ষীবাহিনী এবং প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তিদের যোগসাজসে বন্ধ রাখা কোয়ারি হতে একটি চক্র পাথর উত্তোলন করছে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর এলাকার বাসিন্দা ইমন আহমদ, রাজিব আহমদ, গিয়াছ উদ্দিন, ইসমাইল আলী, মালিক লাল দাশ, হোসেন আহমদ, কুতুব আলী বলেন,‘এক সময় এই শ্রীপুর পাথর কোয়ারিতে বৈধ পন্থায় আমরা পাথর উত্তোলন করেছি। বিনিময়ে সরকার প্রচুর রাজস্ব পেয়েছে। সম্প্রতি কোয়ারি বন্ধ থাকার পরও পাথর খেকো বিভিন্ন চক্র নৌকা প্রতি বড় পাথর ১৬শত টাকা এবং ছোট পাথর ১২শত টাকা, ট্রাক প্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা হতে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা আদায় করছে। শ্রমিকদের মৃত্যুর মুখে টেলে দেয় ওরা।
তারা বলেন, ‘প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কতিপয় রাজনৈতিক নেতার অবৈধ উপার্জন বন্ধ করতে এবং শ্রমিকদের জীবন বাঁচাতে সরকার যেন বৈধ প্রক্রিয়ায় শ্রীপুর কোয়ারি হতে পাথর আহরণের সুযোগ করে দেয়। আর তা না হলে বন্ধ কোয়ারি থেকে কেউ একটি পাথরও তুলতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা হোক।’